
মোহাম্মদ সুমন চৌধুরী, গাজীপুর সিটি: গাজীপুরের টঙ্গীর হাজি মাজার বস্তি এলাকায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৬০ জন অপরাধীকে আটক করেছে।গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়া অভিযান চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। অভিযানে উদ্ধার করা হয় নগদ টাকা, ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ছুরি, চাকুসহ বিভিন্ন জিনিস পত্র।
গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে গিয়ে দেখা যায়, বস্তির চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছেন র্যাব, পুলিশ, সেনা, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা। বস্তিটিতে সারি বাঁধা কয়েক শ টিনশেড ঘর। প্রতিটি ঘরে যাতায়াতের জন্য আছে সরু গলির মতো রাস্তা। সেনাসদস্যরা এক এক করে বস্তির প্রতিটি ঘর তল্লাশি করেন। এ সময় বিভিন্ন ঘর থেকে উদ্ধার হয় মাদক বিক্রির ৩৯ হাজার ৪০০ টাকা, দুটি চাকু, দুটি ছোরাসহ বিভিন্ন জিনিস। এ সময় ৬০ জনকে আটক করা হয়।
অভিযান চলাকালে কথা হয় টঙ্গী পশ্চিম থানার এক উপপরিদর্শকের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যারা চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বেশির ভাগই এ বস্তির বাসিন্দা।আবার কেউ কেউ বিভিন্ন জায়গায় অপরাধ করে এসে এই বস্তিতে আশ্রয় নেয়।কিছুদিন আগেও মহাসড়কে কে আগে ছিনতাই করবে, এ নিয়ে এখানকার দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। আমরা প্রায়ই অভিযান চালিয়ে এদের অনেককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠাই।কিন্তু কিছুদিন পর আবার কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে অপরাধে জড়ায়।’
কথা হয় বস্তির কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে। এর মধ্যে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রেহানা আক্তার বলেন,‘আমরা সকালবেলা কামে চইল্যা যাই। বাসায় আহি রাইত ১০–১১টায়। এর মধ্যে কে, কী করল, সেইড্যা দেখার সময় নাই। তয়ে মাঝেমধ্যেই দেহি বাইরের কিছু লোক (বহিরাগত) বস্তিতে ঘোরাঘুরি করে। কিছু পোলাপাইন তাগোর কাছে মাদক বেচে। এসব নিয়্যা আমরা কেউ কিছু বলতে গেলেই সমস্যা। মাঝেমধ্যে মারধরও করে। হেললাইগ্যা সবকিছু দেইখ্যাও কেউ কিছু কই না। আমরা নিজেরাও সব সময় আতঙ্কে থাকি।’
অভিযানটি পরিচালিত হয় গাজীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে।এতে অংশ নেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ, গাজীপুর ও উত্তরা ক্যাম্পের সেনাসদস্য, র্যাব ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সদস্যরা।এতে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম।
রায়হানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মাজার বস্তির লোকজন ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই এই বস্তিতে অভিযান পরিচালনা করেছি। আমরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িত, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদকসেবী, মাদক বিক্রেতাসহ মোট ৬০ জনকে আটক করেছি। পাশাপাশি মাদকদ্রব্যসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয় এমন বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। রমজান মাসকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে আমাদের এ অভিযান চলমান থাকবে।’
অভিযান শেষে আটক ব্যক্তিদের টঙ্গী পশ্চিম থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান দৈনিক বাংলার বিপ্লবকে বলেন, ‘আটক ব্যক্তিদের আমাদের থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’