
নিয়াজ মোর্শেদ সিয়াম: বিশেষ প্রতিনিধি: গত ১৬ই জানুয়ারি দুপুর ৩:৩০ টায় রাজধানী ঢাকার উত্তরা সংলগ্ন দক্ষিণখান পুলিশফাড়ির বাসিন্দা নাসিমুল আলম খানের মেয়ে ৮ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী জারা হায়াত খান বাসা থেকে ফুচকা খাওয়া এবং কেনা কাটার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। আনুমানিক ৪:৩০ টায় জারার মায়ের সাথে তার শেষ কথা হয়। পরবর্তীতে শত চেষ্টার পরেও তারা জারার সাথে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়। সেদিনই ঠিক রাত ১১:৩০ টায় জারার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ওর মা ও ভাই এর কাছে কিছু সন্দেহজনক মেসেজ আসে যা দেখে তার পরিবার আরো চিন্তিত হয়ে পড়ে। বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হয়। পরবর্তী দুইদিন তার পরিবার তাদের আত্মীয় স্বজন ও জারার বন্ধু বান্ধব এর কাছে খোজ করেও তারা জারার কেনো সন্ধান পায়নি।


বাধ্য হয়ে তার বাবা ১৯ জানুয়ারি দক্ষিণখান থানায় একটি জিডি করে এবং পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা প্রথম আসামি রবিনের কথা জানতে পারে। পরবর্তীতে তার বাবা থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে লাঞ্ছনার শিকার হন। থানা থেকে জারার বাবার কাছে জারা কে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা হয় এবং তাকে অনেক দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়। পরবর্তীতে তার বাবা কে আইনি সহায়তা ছাড়াই কয়েকবার আসামির ঠিকানায় নিজে থেকে অনুসন্ধান এর জন্য পাঠানো হয়। তার কিছু দিন পরেই পুলিশ জানতে পারে ২য় আসামি রাব্বি মৃধার কথা। কিন্তু পুলিশ জিডি এর উপর ভিত্তি করে আইনি তৎপরতা জোরদার না করায় জারার বাবা ২৭ জানুয়ারি থানায় আবার মামলা করতে গেলে তাকে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। পরবর্তী তে পুলিশের অনুসন্ধান থেকে জারার মোবাইল ফোনের কিছু অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। যাতে বলা হয়েছে সে মহাখালী, গুলশান ও বাড্ডা তে অবস্থান করছিল। মামলা করার ৩ দিন পর (৩০ জানুয়ারি) গ্রেফতার করা হয় রবিন ও রাব্বি মৃধাকে এবং পরের দিন তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
১লা ফেব্রুয়ারি জারার বাবা কে একজন কোর্ট পুলিশ জানান এই মামলায় রাকিবুল ইসলাম রিপন নামের একজন কে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার জন্যে বেইল এর সুপারিশ করা হচ্ছে। কিন্তু থানা থেকে রিপনের গ্রেফতারের ব্যাপারে জারার বাবা কে কিছুই জানানো হয়নি। পরবর্তীতে তিনি থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা বেইল চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং তাকে উল্টো রিমান্ড চাওয়ার কথা বলে মিথ্যা আশ্বাস দেয়। যা সময়ের সাথে সাথে ধামাচাপা পড়ে যায় এবং থানা থেকে জানানো হয় অফিসিয়াল অ্যারেস্ট দুটি।
একই দিনে রবিন এবং রাব্বির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পরের দিন ( ২রা ফেব্রুয়ারি ) হাতিরঝিল থেকে জারার হাত পা বাধা অর্ধ-গলিত বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ পোস্টমর্টেমে পাঠায়। আসামিদের কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ করে আরো ৩ জনের সম্পৃক্ততার কথা জানায় পুলিশ। তারা জানায় আসামিরা ১৬ই জানুয়ারি নির্মম ভাবে গণধর্ষণের পর রাত ৮ টার দিকে শ্বাসরোধ করে জারাকে হত্যা করে।
এরপর থেকে এখনো পুলিশের কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।
[ সূত্র : নাসিমুল আলম খান, জারার বাবা ]