মৃত্যুর দুয়ার থেকে সামিয়ার ফিরে আসা: মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সুমন চৌধুরী, টঙ্গী, গাজিপুর সিটি: ফুটফুটে ফুলের মতো ১২ বছর বয়সী সামিয়া, যার জীবন দুরারোগ্য হৃদরোগে বিপর্যস্ত ছিল, অবশেষে ফিরে পেল নতুন জীবন। সাংবাদিক অধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির মানবিক উদ্যোগ এবং কয়েকজন সংবেদনশীল মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা এই শিশুটি এখন সুস্থতার পথে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, সহানুভূতি এবং আন্তরিকতা দিয়ে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব।

এক সাংবাদিকের আকুতি এবং মানবিক সাড়া
ঘটনার সূত্রপাত ১২ জুন ২০২৫, রাত ১টা ৩০ মিনিটে। যখন পুরো শহর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন সাংবাদিক অধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এই শিশু মেয়েটির বার্তা ছড়িয়ে পড়ে, যা নাড়া দেয় অনেকের হৃদয়ে। সামিয়ার আত্মীয় সাংবাদিক মোঃ ইউসুফ আলী লিখেছিলেন, “১২ বছরের সামিয়াকে বাঁচাতে বাবা-মায়ের আর্তনাদ, সাহায্য প্রয়োজন।” তিনি আরও জানান, ২০১৯ সাল থেকে চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়েও কোথাও কোনো সাড়া পাননি। এমনকি নিজের সাংবাদিক সংগঠন থেকেও কোনো সহযোগিতা না পেয়ে তিনি একসময় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন।

এই হৃদয়স্পর্শী আবেদন সংগঠনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সুমন চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংগঠনের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। রাতেই দৈনিক বাংলার বিপ্লব এবং গাজীপুর নিউজ ২৪ সহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে খবরটি প্রকাশিত হয়।

হাল না ছাড়া একদল যোদ্ধা প্রথমদিকে তেমন সাড়া না পেলেও মোহাম্মদ সুমন চৌধুরী হাল ছাড়েননি। তিনি বুঝতে পারছিলেন, এই সামান্য মেয়েটির জন্য জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই তিনি যোগাযোগ করেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান (পিপিএম) এর সঙ্গে। সুমন চৌধুরী জানান, “আমাদের সংগঠনটি নতুন এবং চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল আমাদের নেই। থাকলে সামিয়ার পুরো চিকিৎসার ব্যয় আমরাই বহন করতাম। কিন্তু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।”

আনিসুজ্জামান (পিপিএম) বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সামিয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার সম্মতি প্রদান করেন এবং দ্রুত তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

সামিয়ার নতুন জীবন এবং মানবিকতার জয় শেষ পর্যন্ত, সাংবাদিক অধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির সাহসী উদ্যোগ এবং আনিসুজ্জামান (পিপিএম)-এর মানবিক সিদ্ধান্তে সামিয়ার জীবন রক্ষা পেলো। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে সামিয়া এখন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।

এই ঘটনা কেবল সামিয়ার জীবন বাঁচানো নয়, বরং এটি মানবতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি আমাদের শেখায়, যখন কিছু মানুষ আন্তরিকতা এবং দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে আসে, তখন যেকোনো অন্ধকারেই আশার আলো জ্বালানো সম্ভব।

এই ঘটনা নিঃসন্দেহে সাংবাদিকতা এবং সমাজের সেতুবন্ধন হিসেবে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *