নিয়াজ মোর্শেদ সিয়াম, বিশেষ প্রতিনিধি: সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মডেল মসজিদ প্রকল্পে অঢেল অর্থ লোপাট হয়েছে। প্রতিটি মসজিদের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল গড়ে ১৭ কোটি টাকা, যা নির্মাণে প্রকৃত ব্যয় অর্ধেকেরও কম। বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
জায়গা অধিগ্রহণ, অবকাঠামো নির্মাণ ও অন্যান্য কেনাকাটায় এসব দুর্নীতি হয়েছে। মন্ত্রী, সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এ অর্থ লোপাট করেছেন।
স্থানীয় পলাতক লীগ নেতা, মন্ত্রী ও সাংসদদের ঘনিষ্ঠরা ঠিকাদারি কাজ নিয়ে এগুলো নির্মাণ করেছেন। জমি বিক্রির টাকার লোভে কোনো কোনো মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে শহর এলাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নির্জন এলাকায়।
সৌদি বাদশাহ সালমান এ প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাব করেছিলেন। তখন সরকার প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করে সৌদি সরকারকে প্রেরণ করে, যাতে প্রতিটি মসজিদের জন্য ব্যয় দেখানো হয় গড়ে ১৭ কোটি টাকা।
সৌদি সরকারের সন্দেহ হলে তারা নিজস্ব পদ্ধতি প্রয়োগ করে অনুসন্ধানের জন্য ঢাকার একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়। ঐ সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিটি মসজিদের জন্য সর্বোচ্চ ৮ থেকে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়।
শুরুতে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৮৪২ কোটি টাকা। সৌদি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি লাভের পর ব্যয় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে। ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য পেয়ে দেশটি অর্থায়ন থেকে সরে যায়।
কিন্তু প্রকল্প থেমে থাকেনি। রাষ্ট্রের তহবিল থেকে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। জেলা পলাতক লীগ নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের সমন্বয়ে মসজিদের জমি কেনার সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়।
প্রতিটি মসজিদের জন্য ৪০ শতাংশ জমি কেনা হয়। মৌজা অনুযায়ী যে জায়গার দাম ৪০-৫০ লাখ টাকা হওয়ার কথা, তা কেনা হয়েছে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা পর্যন্ত। গ্রামের সস্তা জমি মসজিদের জন্য সোনার দামে কেনা হয়েছে।
মসজিদগুলো জেলা ও উপজেলা সদরে নির্মাণ করার কথা থাকলেও অধিকাংশই শহর এলাকা থেকে অনেক দূরের নির্জন এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে; এমনকি উপজেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হয়েছে।
ফলে, অধিকাংশ মসজিদ ভুতুড়ে স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে উপজেলা সদর থেকে দূরে মানবশূন্য স্থানে। কিন্তু যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় মুসল্লিরা যেতে পারছেন না।
আওয়ামী লীগ নেতার জায়গা বিক্রির জন্য চাঁদপুরে ফরিদগঞ্জ উপজেলা মসজিদ করা হয়েছে উপজেলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ১০০ গজের ভেতরে। মসজিদটি শহরের অন্য জায়গায় করার জন্য বিক্ষোভও হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।
অনেক মসজিদে যাতায়াতের সংযোগ নেই; কিছু মসজিদে রক্ষণাবেক্ষণের লোকবল নেই; কোথাও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে; কোনো কোনো মসজিদে অজুখানায় কল নেই; কয়েকটি মসজিদের টাইলসেও ফাটল দেখা গেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ সুমন চৌধুরী
মোবাইল: +৮৮ ০১৬৭০৫৩৯৯৩৫
জিমেইল: dainikbanglarbiplob@gmail
ওয়েবসাইট: dainikbanglarbiplob.com