
দৈনিক বাংলার বিপ্লব, রাজশাহী প্রতিনিধি: ছাত্র- আন্দোলনের হামলার ঘটনায় রাজশাহীতে করা মামলায় গ্রেফতার এক আসামির পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে থানার ভেতরে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়েছেন বিএনপির দুই পক্ষের নেতাকর্মীগন। পরে আসামিকে থানা থেকে আদালতে নেওয়ার সময় হাতকড়া পরা অবস্থায় তিনি কৃষক দলের এক নেতাকে লাথি মারেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
আজ শনিবার বিকালে নগরের বোয়ালিয়া থানার ভেতরে এ ঘটনাটি ঘটেছে। গ্রেফতারকৃত ওই আসামির নাম আবুল কালাম আজাদ (৫৫)। তার বাড়ি নগরের বালিয়াপুকুর এলাকায়। তিনি বিসিআইসির সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এবং ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলার সভাপতি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি উষামা বিন ইকবাল নামের একজন বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার ৬৫ নম্বর আসামি আবুল কালাম।
লাঞ্ছিত হওয়া কৃষক দলের নেতার নাম আল আমিন ওরফে টিটু। তিনি কৃষক দলের রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক। গ্রেফতার হওয়া আবুল কালাম আজাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তিনি থানায় বিএনপির অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আবুল কালাম যখন গ্রেফতার হয়ে থানায় ছিলেন, তখন থানায় কৃষক দল নেতা আল আমিন সাংবাদিকদের বলছিলেন, ছাত্র-জনতার ওপরে ৫ আগস্ট যে হামলা হয়েছে, তার গুলি কেনার টাকা লিটনকে (সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান) দিয়েছেন এই আবুল কালাম আজাদ। এই কথার তীব্র প্রতিবাদ জানান মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন, আসলাম সরকার, শাহ মখদুম থানা বিএনপির সদস্য সাবেক আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান শরীফসহ কয়েকজন। তখন তাদের মধ্যে তুমুল বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি সংঘর্ষ বাধে । এর মধ্যে আবুল কালামকে আদালতে নিতে গিয়ে থানা থেকে পুলিশের গাড়ির দিকে নেওয়া হচ্ছিল। তখন সামনে পেয়ে হাতকড়া পরা অবস্থায় আল আমিনকে লাথি মারেন তিনি। এ সময় আবুল কালামের বিপক্ষের নেতারা তাকে ধরতে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশসহ অন্যরা তাদের নিবৃত্ত করেন।
বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন বলেন, আবুল কালাম আজাদ বরাবরই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাকে আওয়ামী লীগের তকমা লাগিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের পরিচিত হওয়ায় সমবেদনা জানাতে থানায় দেখা করতে যাই। কিন্তু আল আমিন যখন আমাকে উদ্দেশ করে বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ হয়ে তাকে ছাড়াতে এসেছেন, তখন আমি তার কথার প্রতিবাদ করি। কার তিনি বিএনপির লোক।
তবে কৃষক দলের নেতা আল আমিন বলেন, আবুল কালামকে গ্রেফতারের খবর শুনে বিএনপির নেতারা তাকে ছাড়াতে থানায় যান। এইটা জানার পর আমিও থানায় গিয়ে এর প্রতিবাদ করি। আর ওই ক্ষোভে আমাকে লাথি মারা হয়। আবুল কালাম আজাদ খায়রুজ্জামান লিটন ও সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে কীভাবে মিশেছেন, তার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছি আমি।
এদিকে রবিবার বেলা ২টায় নগরের একটি রেস্তোরাঁয় আবুল কালামের নিঃশর্ত মুক্তি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছেন সার ব্যবসায়ী ও ট্রাক সমিতির নেতারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএডিসির রাজশাহী ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহফুজুল হাসনাইন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ষড়যন্ত্র এখনও বিদ্যমান। তারই অংশ হিসেবে জনপ্রিয় একজন রাসায়নিক ও ট্রাক পরিবহন ব্যবসায়ী নেতাকে মোটা অঙ্কের টাকা না পাওয়ায় তার পদ থেকে সরাতে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।